জলছবি
জলছবি
কোয়েলা
কাল রাতে অবিরাম বৃষ্টির শব্দের মাঝে রাত কেটেছে লাল মাটির দেশের এই অতিথী নিবাস-এ। জায়গাটার নাম হালসীপাড়া, কে জানে কেন এমন নাম। ঝুপঝুপে অন্ধকার, নিবু আলো আর জঙ্গল জড়িয়ে রাখা এই অতিথীশালার সবখানে শুধু স্বপ্নের চলাচল। মাঝে মধ্যে কখনো বা একটু যেন শিরশিরে অনুভুতি।সারা রাত এখানে বৃষ্টি সঙ্গত করেছে ঘুমের সাথে। রাত ভাঙ্গা ঘুমের মধ্যে টালির চালের বারান্দায় ঝুপঝুপ শব্দ।
ভোরের
বেলা বেরিয়ে এলাম ঘর
থেকে। তখনও
বৃষ্টি, বিরামহীন। ছপছপে
জলে পা দিতেই বরফ
ঠান্ডা জলে একপশলা খুশি। হঠাৎ
মনে হলো সূর্য্য না
ওঠা ভিজে সপসপে সকালটা
আমায় সঙ্গী হতে ডাকছে,
আমিও চলতে শুরু করলাম। কিছু
দূরে দূরে দু একটা
অতিথী আবাস। তাদের
শান্ত রঙ আর যত্নে
সাজানো বাগানে আরামের হাতছানি। পছন্দের
বই আর উষ্ণ চায়ের
কাপ হাতে বসে পড়ার
অপেক্ষা কেবল।
বৃষ্টির
সাথে খানিক এগোতেই দুপাশে
শুধুই সবুজ, জঙ্গল নয়,
ক্ষেত। আসার
সময় সঙ্গে ছাতা নিয়েছিলাম। অকাল
বৃষ্টি গায়ে মাখার নয়,
দেখার। দুপাশে
কেবল ফাঁকা জমি আর
এত্তবড় আকাশ। ঘন
কালো মেঘে ছেয়ে আছে
আকাশখানা। আর
একটু এগোলেই যেন দুহাত
বাড়িয়ে ছুঁতে পারবো আকাশটাকে। এগোতে
থাকলাম আর রাস্তাটা এঁকে
বেঁকে চলতেই থাকলো আমার
সাথে। হঠাৎ
একটা উজ্জ্বল নীল রঙের ডানা,
যেন কোনো তুলীর টান,
ঝলক দিয়ে উঠলো একদিক
থেকে একটু অন্য দিকে। তারপর
আর তাকে খুঁজে পেলাম
না। চারদিকে
কোনো শব্দ নেই, কেবল
ঝিরঝির করে একঘেয়ে নেশা
ধরানো বৃষ্টির বয়ে যাওয়ার আওয়াজ। চলতে
চলতে বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে জল
বয়ে যাওয়ার চঞ্চল শব্দ
এলো, যেন কোনো দুষ্টু
মেয়ের হাসির শব্দ।
নিজের অজান্তেই কখন আমিও হেসে
ফেলেছি। চমক
ভাঙালো লাল রঙের একটা
গঙ্গা ফড়িং। আকাশের
দিকে চেয়ে দেখি পাহাড়ের
মত সব মেঘ উড়ে
উড়ে চলেছে হাওয়ার টানে। সবুজ
ক্ষেতেও সে হাওয়ার দোলনা। সবুজ
গাছগুলোর উপর দিয়ে গড়িয়ে
গেল হা হা করে
হেসে আর তার সাথে
তাল মিলিয়ে গাছগুলো শুয়ে
পড়েই আবার দাঁড়িয়ে উঠে
দেখতে থাকলো বাকি গাছগুলো
কেমন করে খুশি জড়িয়ে
নেয় গায়ে। এক
সারির পর অন্য সারি,
চারা গাছের সাথে হাওয়ার
খেলা চলতে চলতে অনেক
দূরে গিয়ে মিলিয়ে গেল। রেশটুকু
থেকে গেল। অল্প
হাওয়ায় দুলতেই থাকলো কচিকাচা
গাছগুলো। রাস্তা
চলেছে তো চলেইছে, এঁকে
বেঁকে। এতক্ষনে
একজন মানুষকে দেখা গেল পলিথিন
মুড়ে জবুথবু হয়ে।
জানলাম ডাইনে গেলে অনেকদূরে
নদী আছে। পরেরবার
এসে নদীর সাথে আলাপ
জমাবো। ছাতা
ভুলে, বেপরোয়া বৃষ্টি আমার সারা
শরীরে। এবার
ফেরার পালা। ফিরতি
পথে দেখা হলো গরুর
পাল নিয়ে চলা লোকজনের
সাথে। জলে
ভেজা রাস্তায় তাদের আঁকাবাঁকা ছবি। হয়তো
আশেপাশে গ্রাম আছে কোথাও। গ্রামটাকেও
তবে দেখা হলো না
এবার। আরো
আরো বৃষ্টি মেখে ফিরতে
থাকলাম। ফিরতে
তো হবেই, নিজের কাছে,
ছবির কাছে...
No comments
Thanks for your comment