TIE SPEAKS

TIE Speaks is a new web based magazine from the NGO Theatre in Education. The aim is to address and discuss different topics of art and culture through pieces written by different acclaimed people from different arena. We want to ensure that the write ups are neither the 'all informative cliche' type, nor the 'all discussion boring' type. We are creating something exciting which has the capability of entertaining a mind while making one think and grow. Give it a look and cheer us through your loving support.

"চাইলেই হবে - তাই চাইতে হবে" #২

চাইলেই হবে - তাই চাইতে হবে

জয়তি মুখার্জি





আচ্ছা, ধরুন, আপনি বহুদিন ধরে কিছু একটা করবেন বলে ভাবছেন ….. ধরুন না, আপনি কোন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং আপনি যথেষ্ট কনফিডেন্ট যে, আপনি প্রথম হবেন বা আপনার মতন প্রস্তুতি কারোর নেই। কিন্তু, ঘটনাক্রমে দেখা গেল, সেই পরীক্ষাটাই ক্যান্সেল হয়ে গেছে; তখন আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে মনে হয়…..? অথবা, আপনি একটা নতুন মোবাইল ফোন কিনবেন বলে অনেক দিন ধরে একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছেন। ঠিক করেছেন, এই দুদিন পরেই ফোনটা কিনে ফেলবেন। মনটা বেশ উৎফুল্ল। অনেকদিনের ইচ্ছাপূরন হতে চলেছে। কিন্তু……. এর মাঝে হঠাৎকরে সব জমানো টাকা চুরি হয়ে গেল। বলুন তো, কেমন লাগবে? ভাবুন একবার শুধু।নতুবা ধরুন না, আপনি খুব যত্ন করে কোন খাবার বানিয়েছেন, বাড়ীতে অতিথি আসবে, তাদের জন্য। কিন্তু পরিবেশন করতে গিয়েপুরোটাই হাত থেকে পড়ে গেল…. তখন? কেমন লাগবে?আজ যে গল্পটা বলতে চলেছি…. সেইটা এইসব পরিস্থিতির মানসিক অবস্থাকে এক সজোরে আঘাত হানতে চলেছে
আজ আপনাদের এক বাঘের বাচ্চার গল্প শোনাব
সময়টা ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দ, হাঙ্গারীর আর্মিতেক্যারলি ট্যাক্সকে বিশ্বখ্যাত পিস্তল শ্যুটার আখ্যা দেওয়া হল
এখন, কে এইক্যারলি”?
১৯১০ সালে ২১শে জানুয়ারি বুদাপেস্ট জন্ম হয় ক্যারলির। খুব অল্প বয়সেই সে হাঙ্গারীর আর্মি পিস্তলটীম এর সদস্য হয়ে পিস্তল চালনায় দক্ষ হয়ে ওঠে। নিজের ডানহাতটা নিয়ে ভারি গর্ব ছিল তার। নিজে সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল – “This is my right hand and I will make this hand the best shooting hand in the world”.
বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় জয়লাভ এর পরেই তাকে বিশ্বখ্যাত পিস্তল শ্যুটারের আখ্যা দেওয়া হয়
সে আর্মি কমিশনড অফিসার পদধারী ছিল না বলে, ১৯৩৬ সালের সামার অলিম্পিকের সময় হাঙ্গারীর শ্যুটিং দলে সার্জেন্ট ক্যারলির স্থান হয় না।বার্লিন বিভাজনের সময় এই নিয়ম বিলুপ্ত হয়ে যায়
ক্যারলি খুব কাছেই ছিল ১৯৪০ সালের টোকিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক লাভের। সকলেই জানত, ক্যারলি ছাড়া পিস্তল শ্যুটিংএ আর কেউই সোনা পেতে পারবে না; কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় এক;
১৯৩৮ সালে, একদিন একটা আর্মি ট্রেনিং সেশনে ক্যারলির ডানহাতে হ্যান্ডগ্রেনেড ফেটে যায় সাথে তার স্বপ্নপুরনের যবনিকা পতন হয়হ্যাঁ, আপনি এটাই ভাবছেন তো? ডান হাত ছাড়া বন্দুক চালাবে কেমন করে, তাই না ?
ঠিকই তো, সে তো ভাবতেই পারতো, কেন তার সাথেই বিধাতা এমন আচরণ করলেন? সারা বিশ্বের মধ্যে তার সাথেই এমন কেন হল? আমরাও তো তাইই ভাবতাম আর কপাল চাপড়াতাম; তাই তো?
কিন্তু, ক্যারলি ছিল একজন সাচ্চা বাঘের বাচ্চা। সে কি করল জানেন? আচ্ছা, আপনারা সেই ব্যাঙ-এর গল্পটা শুনেছেন? যেখানে ব্যাঙদের মধ্যে ঠিক হয়, একটা লম্বা বাঁশে যে ব্যাঙ উঠতে পারবে, সেই হবে ব্যাঙের রাজা। সব ব্যাঙ চড়তে শুরু করল, আর চারদিক দিয়ে শুরু হল বলাওরে, পড়ে যাবি, অনেক উঠে গেছিস, আর পারবি না, নেমে আয়…. ইত্যাদি। ধপ ধপ করে ব্যাঙেরা পড়তে লাগলো, শেষে দেখা গেল, যে ব্যাঙটা সবচেয়ে উপরে উঠেছিল, মানে যে ব্যাঙটা জিতল, সে শুনতে পেত না
ঘটনাটির পর ক্যারলিকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সব্বাই মনে করল, মনের দুঃখে ক্যারলি কোথাও চলে গেছে;
ক্যারলি, সেই বাঘের বাচ্চার ছিল স্টিলের মতন স্নায়ু। সে মানুষের সহানুভূতি পেতে চায় নি, সে চেয়েছিল নিজের স্বপ্নপুরন করতে
একমাস হাসপাতালে থাকার পর সে নিজে এক গুপ্ত জায়গায় চলে যায়, এখনো সে বেঁচে আছে, এখনো তার কাছে তার বাঁ হাত আছে, সে তার বাঁ হাতটাকেই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী বানাতে বদ্ধপরিকর, অলিম্পিকে সোনা তাকে জিততেই হবে যে। He had the will, he had the attitude, he had the determination to succeed, এবং সে নিজেকে একজন সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করল, এবং নিজের বাঁ হাতটাকে শ্যুটিংএর জন্য তৈরি করতে লাগলো। তার ব্যাথা করত, কিন্তু সে তার সমস্ত অক্ষমতাকে, বেদনাকে চালনা করেছিল নিজের লক্ষ্যপুরনের দিকে। সমাজের থেকে আলাদা করেছিল নিজেকে, যাতে কোনোরকমের নেতিবাচক উক্তির বা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয়। নিজের চোখের সামনে নিজের স্বপ্নকে রোজ সে স্পষ্ট দেখতে পেত। অসম্ভব অনমনীয় দৃঢ় মনোবল তার বাঁ হাতকে ধীরে ধীরে যোগ্য করে তুলছিল। এইবার সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল তার বাঁ হাতকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শ্যুটিংহ্যান্ড প্রতিপন্ন করতে
১৯৩৯ সাল, হাঙ্গারীতে জাতীয় শ্যুটিং প্রতিযোগিতার আসরে ক্যারলির আবির্ভাব হল। সকল প্রতিযোগীরা বেজায় খুশি, সবার কাছেই ক্যারলি একজন আদর্শ, তাদের বিশেষ দিনে ক্যারলির উপস্থিতি নিশ্চিতরূপে অনুপ্রেরণার যোগান দেবে। সবাইকে চমকে দিয়ে ক্যারলি বলে, সে কাউকে অনুপ্রাণিত করতে আসে নি, সে এসেছে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। সেই বছর সেই চ্যাম্পিয়নশিপ কে জেতে সেটা আর এখন আলাদা করে বলতে হবে না নিশ্চই। আজ্ঞে হ্যাঁ, সারাদেশের সকল মানুষকে দেখিয়ে দেয় ক্যারলি,  প্রতিবন্ধকতা শরীরে থাকে না, মনে থাকে; হাতে তার ধরা ছিল সোনার পদক
এর পর, পর পর দু বার ১৯৪০ সালের টোকিও অলিম্পিক এবং তার পরে ১৯৪৪ সালের অলিম্পক বাতিল হয়ে যায়, কারণ ছিল বিশ্বযুদ্ধ। ক্যারলির বয়স বাড়ে সাথে সাথে মনোবলও। ক্যারলির অনুশীলন থামে না
১৯৪৮ সাল, লন্ডন অলিম্পিক, সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে, পিস্তল চালনায় সোনা লাভ করে এক হাতের ক্যারলি। এখানে সে থেমে থাকে নি….
১৯৫২ সালের হেলসিঙ্ক অলিম্পিকেও সে সেকেন্ড গোল্ডমেডেল লাভ করে
একবার ভাবুন, আমরা সবসময়, যা আমাদের নেই, যা হারিয়ে গেছে, সেই নিয়েই দুঃখ করি, পড়ে পড়ে কাঁদি, কিন্তু যেটা আছে, সেটা নিয়ে যে ভালো থাকা যায়, সেটাই ভুলে যাই
কিছু মন থেকে চাইলে, সেটা পাওয়া সম্ভব। উপায়টাও, সুযোগ হিসেবে পেতে পারা যায় সেই ইচ্ছাশক্তির জোরেই।আর এই ইচ্ছাশক্তিই অসম্ভবকে  সম্ভব করিয়ে দেয়
হ্যান্ডগ্রেনেড ক্যারলির ডানহাতকে কেড়ে নিয়েছিল, কিন্তু অলিম্পিকে সোনা যেতার ইচ্ছেকে কেড়ে নিতে পারে নি
তা হলে, আবার প্রমানিতচাইলেই হবে, তাই চাইতে হবে
জয় ইচ্ছাশক্তির জয়!!






Powered by Blogger.