TIE SPEAKS

TIE Speaks is a new web based magazine from the NGO Theatre in Education. The aim is to address and discuss different topics of art and culture through pieces written by different acclaimed people from different arena. We want to ensure that the write ups are neither the 'all informative cliche' type, nor the 'all discussion boring' type. We are creating something exciting which has the capability of entertaining a mind while making one think and grow. Give it a look and cheer us through your loving support.

“চাইলেই হবে – তাই চাইতে হবে” #১

চাইলেই হবে – তাই চাইতে হবে

জয়তি মুখার্জি




এক যে ছিল পাগলা জগাই…..
সত্যি গো! প্রায় একশো বছর আগেকার এক পাগলা জগাই এর গল্প আজ তোমাদের বলব
তখনকার দিনে, টমাস আলভা এডিসন সাহেব ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করে বিশ্বখ্যাত হয়েছেন। সেই সময়, এক পাগলা জগাই, নাম তার এডউইন সি বারনেস, না আছে তার সেরকম বিদ্যে, না আছে ট্রেনের টিকিট কাটার পয়সা, কিন্তু সে স্বপ্ন দেখে এডিসন সাহেবের বিজনেস পার্টনার হওয়ার। বোঝ কাণ্ড। মানুষটার একটার বেশী পরনের জামাও ছিল না, কিন্তু ছিল অসম্ভব ইচ্ছেএডিসন সাহেবের বিজনেস পার্টনার তাকে হতেই হবে
এই ইচ্ছে তাকে দিয়ে এক ভয়ানক কাণ্ড ঘটায়। একদিন, টিকিট না কেটেই সে নিউ জার্সির ট্রেনে চড়ে বসে ওয়েস্ট অরেঞ্জ যাবার উদ্দেশ্যে; সেখানেই তো তার স্বপ্নপুরনের চাবিকাঠি আছেআরে বাবা, সেখানেই তো এডিসন সাহেবের ল্যাবরেটরি
একটা মানুষ, যার রোজগার বলতে কিছু নেই, দু বেলা খাবার জোটে না, হতদরিদ্র বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাইসে কি না স্বপ্ন দেখে ব্যাবসা করারতাও আবার গ্রেট টমাস আলভা এডিসনের সাথে! খুব সাধারণ ভাবে ভাবলে, এটাকে পাগলামি ছাড়া কিছুই বলা যায় না। কিন্তু, শুরুতেই বলেছিলাম, গল্পটা তো এক পাগলা জগাই এরই
সালটা ১৯০৫, ছন্নছাড়া চেহারা, ছেঁড়াখোঁড়া জামা কাপড় আর অসম্ভব সাহস নিয়ে সে সোজা গিয়ে হাজির এডিসন সাহেবের সামনে। একটুও চিন্তা না করে, সময় নষ্ট না করে, অকপটে নিজের ইচ্ছের কথা জানায় সে বিজ্ঞানীকে। অফিসের বাদবাকি লোকজন প্রথমটায় প্রচণ্ড অবাক হয়, তারপর শুরু হয় হাসাহাসি। সেই পাগলা জগাই কিন্তু ঘাবড়ে যায় না, সে বলেস্যার, আমি জানি না ঠিক কি ভাবে আমি কাজ করব, কিন্তু এইটুকু জানি যে, আপনি পাশে থাকলে, আমি ঠিক পারব
যেটা বলার কথা, সেদিন সবাই হাসলেও এডিসন সাহেব কিন্তু হাসেন নি।উনি দেখতে পাচ্ছিলেন, ওনার সামনে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এক যুবক, যার উজ্জ্বল দুটো চোখ এক অসম্ভব দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় বহল করছিল, যার একমাত্র অভিপ্রায় তার কম্পানি কে এক সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া
বারনেস এর আত্মবিশ্বাস এবং অদমনীয় ইচ্ছে দেখে এডিসন সাহেব তাকে একটা সুযোগ দিলেন তার সাথে কাজ করারবিজনেস পার্টনার হিসেবে কিন্তু নয়, ফ্লোর স্যুইপার হিসেবে। তার স্বপ্নের মানুষটার দেওয়া কাজের প্রস্তাব বারনেস মাথা পেতে নেয়। দেখো, সে কিন্তু পারত অত্যন্ত অপমানিত বোধ করতেযার কাছে সে বিজনেস পার্টনার হতে এসেছে, সে তাকে ঝাড়ুদারের কাজ দিচ্ছে, এটা কি চট করে মেনে নেওয়া যায়? তোমার বা  আমার সাথে এরম হলে তো আমরা অসম্ভব অপমানিত, রিজেক্টেড বোধ করতাম…. তাই না? কিন্তু তো একটা পাগলা জগাই এর গল্প….. তার সব কিছুই অন্যরকম
বারনেস ভাবলো, এইটাই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ; এডিসন সাহেব কে সে দেখিয়ে দেবে, তার দেওয়া কাজ সে কত যত্নের সাথে, মন দিয়ে করতে পারে। সে এটাও ভাবলো, এই কাজ করতে শুরু করলে, সে এডিসন সাহেবের সাথে থাকতে পারবে, মানুষটা কেমন করে কাজ করে, কেমন চিন্তা ভাবনা করেসে আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে। সে এটাও বুঝতে পারল, এডিসন সাহেবের সাথে কাজ করতে করতে সে তার বন্ধু, বিশ্বের অন্য সব বড় বড় সম্মানীয়, প্রভাবশালী লোকজনের সাথে পরিচিত হতে পারবে
ঝাড়ু হাতে মনের আনন্দে কাজ শুরু করল বারনেস। দিন কাটতে লাগলো, মাস কাটতে লাগলো, বছর ঘুরতে লাগলো। কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে গিয়ে এডিসন সাহেবকে সে মনে করিয়ে দিত তার ইচ্ছের কথা
ল্যাবরেটরি ঘুরে ঘুরে ঝাড়ু দিতে গিয়ে দিনের পর দিন নিজের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে শান দিচ্ছিল বারনেস। সে অপেক্ষায় ছিল, কবে তার কাছে সেই মোক্ষম সময় আসবে, যেখানে সে তার যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারবে এডিসন সাহেবকে
ঠিক দু বছর পড়ে এল তার কাছে সেই সুবর্ণ সুযোগ। ইচ্ছেশক্তি যুগ যুগ জিও!!
কয়েক বছর যাবৎ, এডিসন সাহেব একটা ডিক্টেটিং মেশিনের উপর কাজ করছিলেন, যাতে মানুষের গলার স্বর রেকর্ড করা যাবে। পরবর্তীকালে তিনি এই মেশিনটির নাম দেনএডিফোন”, এতে একটি ওয়াক্স সিলিন্ডারে গলার স্বরভয়েস লেটারহিসেবে স্টোর হত। বিজ্ঞানী ভাবতেন, এই মেশিনটিও তার আগের আবিস্কারের মতন সারা বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেবে।কিন্তু, এডিসন সাহেবের সেলস টিমের লোকজন এই নতুন যন্ত্রটি নিয়ে ব্যাবসা করতে ইচ্ছুক হল না, তাদের মতে, এইএডিফোনকোম্পানিতে ব্যাবসায়িক সাফল্য আনতে অপারগ।এডিসন তার কাছের লোকজনদের এই বিরূপ মনোভাব  দেখে যারপরনাই হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন


এবার, আমাদের পাগলা জগাই ব্যাপারটা অনেক দিন ধরেই লক্ষ্য করছিল। বারনেস নিজে মেশিনটা ব্যাবহার করতেও শিখেছিল। সে বুঝতে পারল, এই মেশিন বাজারে একটা হট কেক হতে পারে। অজস্র মানুষ যখন খুশি তাদের চিন্তা, আইডিয়া, আলোচনা এই মেশিনের সাহায্যে রেকর্ড করে রাখতে পারে, পরবর্তীকালে সুবিধামতন চালিয়ে শুনতে পারে, সে ক্ষেত্রে কোন স্টেনোগ্রাফারকে প্রয়োজন হবে না। ফলস্বরুপ, মানুষের সময় বাঁচবে, কাজে গতি আসবে এবং ব্যাবসায় লাভ হতে বাধ্য
এডিসনের অত্যুৎসাহী কর্মচারী তার দূরদৃষ্টির ভরসায় এক মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করে একরাশ আশা নিয়ে উপস্থিত হয় টমাসস্যারের সামনে। স্যারকে সে জানায়, তাকে সুযোগ দেওয়া হলে, সেএডিফোনবিক্রি করতে পারবে। এইবার বারনেসের প্রস্তাবে এডিসন নতুন দিশা পায়। বারনেসের প্রচেস্টা, ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশীলিত দূরদৃষ্টি এডিসনকে বাধ্য করে তাকে একটা সুযোগ দিতে


জানো তোমরা, এরপর পাগলা জগাই কি কাণ্ড করেছিল ? এক মাসে সে এক হাজারএডিফোনবিক্রি করে ফেলেছিল। শুধু তাই নয়, বাজার থেকে লোভনীয় কন্ট্রাক্ট ছাড়াও সে সম্পূর্ণ আমেরিকায়এডিফোনবিক্রির ডিস্ট্রিবিউটরশিপও পায়
পাগলা জগাইকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খুব কম বয়সেই সে কোটিপতি হয়ে যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, বারনেসের চেষ্টায় অগনিত মানুষএডিফোনব্যাবহার করে বহুল উপকৃত হয়। হয়তো, এডিসন নিজেও কখনো কল্পনা করতে পারেন নি, তার বানানো মেশিন ভাবে মানুষের কাজে আসতে পারে

অদম্য ইচ্ছে,স্বপ্নপুরনের জন্য মনের জোর এবং কোন পরিস্থিতিতেই আশাহত না হওয়া এই পাগলা জগাই ওয়েস্ট অরেঞ্জের ল্যাবরেটরি পরিস্কার করতে করতে নিজের জীবনের সাফল্যের পথ পরিস্কার করেছিল।সে নিজেকে গ্রেট টমাস আলভা এডিসনের কাছে বিশ্বের সেরা সেলসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল
এবার যেটা বলব, এই পাগলা জগাই, কি ভাবে পারল এই চরম সাফল্য লাভ করতে
হ্যাঁ, অনেক ফ্যাক্টর ছিল, একটু দেখা যাক
বারনেস জানত সে কি করতে চায়
সে নিজের কল্পনাশক্তিকে কখনো নিভিয়ে দেয় নি। খালি পেট থাকতে সে যে স্বপ্ন দেখেছিল, নিজেকে সে যে ভাবে কল্পনা করেছিল, সেটাকেই সে রুপ দিয়েছে বাস্তব জীবনে
সে একদম নিচু স্তর থেকে নিজেকে উপরে উঠিয়েছে। তার কাজের ফোকাস তাকে দিয়েছে তার স্বপ্নপুরনের চাবিকাঠির হদিস
সে নিজে সুযোগ তৈরি করেছে এবং গ্রহণও করেছে
অসম্ভব আত্মবিশ্বাস যেটা কোনরকম বিরূপ পরিস্থিতেও তাকে টলাতে পারেনি
বহু বছর ধরে, বহুক্ষণ ধরে মনঃসংযোগ সহকারে সে কাজ করেছে নিজের ইচ্ছাপূরণের জন্য
বারনেস কথা কম বলতো, নিজের কাজের মাধ্যমেই সে নিজেকে প্রমান করেছে বরাবর
কোন রকম সমালোচনা, কটূক্তি, বাধাবিপত্তি তাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি
নিজের কল্পনা দিয়ে নিজেকে যোগ্যতম তৈরি করেছে নিজের স্বপ্নপুরনের জন্য
১০ নিজেকে সফল করার পথে সে নিজেকে অন্যদের সফলতার হাতিয়ার হিসেবে সর্বদা মেলে ধরেছে
১১ নিজের কাজের জায়গায় সে নিজেকে একমেবাদ্বিতিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল
১২ নিজের কাস্টমারদের বেস্ট সার্ভিস দিতে সে ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ
বারনেস যখন এসেছিল ওয়েস্ট অরেঞ্জের ল্যাব কাজ করতে, তার কাছে একটির বেশী জামা ছিল না। ল্যাব কাজ করতে করতে জমান টাকা দিয়ে সে নতুন দামি জামা কিনতে শুরু করে। আসতে আসতে তার এই শখ তাকে প্রবাদপ্রতিম করে তোলে। নেপলিয়ান হিল, তার “Law of Success” বইতে লিখেছেন –“In those days he had the largest and most expensive collection of clothes I had ever seen or heard of one man owning. His wardrobe consisted of thirty-one suits; one for each day of the month. He never wore the same suit two days in succession.”
নেপলিয়ান হিল একবার অতি কৌতূহলবশতঃ বারনেস কে জিজ্ঞেস করেছিলেনআপনি আপনার বেশভূষাকে এত প্রাধান্য দেন কেন? বারনেস উত্তর দিয়েছিলেন – ‘আমি অন্যদের ইমপ্রেস করার জন্য এসব করি না, অন্যদের আমার প্রতি যে ইম্প্রেশন আছে, তার জন্যই করি
বারনেস কখনো নিজে কতটা অর্থ রোজগার করেছেন বা কত মেশিন সেল করেছেন, এই খাতে নিজের সাফল্যকে বিচার করেন নি। ওনার কাছে এই পরিসংখ্যান শুধু ব্যাবসার বাই-প্রডাক্ট; ওনার কাছে সাফল্যর অর্থ ছিল- Customer Satisfaction.

শুধু তার জন্যই –“Made by Edison and Installed by Barnes” স্লোগানের উৎপত্তি
তাহলে, এটা তো প্রমান হল, জীবনের চাওয়াটা জোরদার হলেই জীবনের পাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়। নিজের এই ইচ্ছাপূরণের জন্য পাগলামিটা আদতে বড্ড কাজের; ঠিক কি না?
তাই তো বলি – “চাইলেই হবেতাই চাইতে হবে
জয়, ইচ্ছাশক্তির জয়!!



Powered by Blogger.